অ্যাজটেক প্রিন্ট
বিন্যাসে, নকশায় ও রঙের ঐশ্বর্য্য বহন করছে প্রচীন সভ্যতা ও সংস্কৃতির সাক্ষর। অ্যাজটেক প্রিন্ট। ট্রেন্ডি, ফ্যাশনেবল আর বর্ণিল আউটফিটের জন্য
গ্রিক পুরাণ, জাপানের কিংবদন্তী সামুরাই বা রহস্যময় মমি ও পিরামিডের মতো প্রাচীন সভ্যতা ও সংস্কৃতির দিকে মনোযোগ দিলে আমাদের ক্রমাগত বিশ্মিত হতে হবে। সেই অপার ভান্ডার হতে অধুনিক বিশ্ব প্রাণিত হচ্ছে নানান বিষয়ে। আর ফ্যাশন বিশ্বের জন্যেতো পৃথিবীর ইতিহাস প্রাণিত হওয়ার বিশাল এক উৎস। ডিজাইনাররা এই ভান্ডার হতে প্রতিনিয়ত গ্রহণ করে চলেছেন ফ্যাশন ধারণা আর তথ্য-উপাত্ত। যেমন, আফ্রিকার এথনিক ও ট্রাইবাল প্রিন্টের ফ্যাশন শো, ফ্র্যাঞ্চ রানী ম্যারি আন্তোনেত্তির আজব পোশাক, প্রাচীন রোমানদের টিউনিক বা নিমা, পারস্যের পেইজলি প্রিন্ট প্রভাবিত পোশাক আমরা দেখেছি। তারই ধারাবাহিকতায় মেক্সিকোর অ্যাজটেক প্রিন্ট। সময় এখন সেইদিকে মনোনিবেশ করার। কেননা অ্যাজটেক প্রিন্ট হতে পারে শীত কিংবা গ্রীষ্মের হটেস্ট ট্রেন্ড।
অ্যাজটেক সাম্রাজ্যের জন্ম হয়েছিলো মেক্সিকো উপত্যাকায়। একসময় এখানে এসে বসতি শুরু করে আদিবাসীরা, যারা বিভিন্ন সংস্কৃতি থেকে নানান রকমের অভিজ্ঞতা নিয়ে আসে। আর অ্যাজটেক প্রিন্ট বা ডিজাইন হলো এই সব সংস্কৃতির মিলিত ফলাফল। যদিও আজকের দিনে এটি বেশ জনপ্রিয় একটি ট্রেন্ড, তবে অ্যাজটেক টেক্সটাইল ডিজাইনগুলি তৈরি, প্রচলন ও মূল্য পেয়েছিলো ১৪ শ শতাব্দীরও আগে থেকে। ডিজাইনটি তৈরি হয় মূলত ওয়ারিয়র ড্রয়িং, পেইন্টিং ও পিকটোগ্রাফ ব্যবহার করে। এই ড্রইংগুলো তাদের মন্দিরের দেয়ালে শোভা পেত।
মেক্সিকো চমৎকার ইতিহাসে পূর্ণ খুবই আকর্ষণীয় একটি দেশ। ফ্যাশনের জনপ্রিয় একটি ট্রেন্ড হলো ট্রাইবাল প্রাণিত হওয়া। তারই একটি হলো অ্যাজটেক প্রিন্ট। যা এসেছে সেন্ট্রাল মেক্সিকোর অ্যাজটেক থেকে। বিভিন্ন উপজাতির প্রভাবে রূপায়িত। অ্যাজটেকরা জীবন ও প্রকৃতিকে উপভোগ করে তাদের কাপড়ে মাছ, প্রজাপতি, কীট-পতঙ্গ আর ফুলের প্রতীক এঁকে। পর্বত, বিভিন্ন বস্তু এমনকি ঘরবাড়ি প্রাণিত গ্রাফিক ডিজাইনও তা থেকে বাদ পড়ে না। অ্যাজটেক প্রিন্ট ট্রাইবাল প্রিন্ট দ্বারা প্রাণিত এমন একটি ডিজাইন যার গ্রাফিক বেশ নির্মল দেখায় এবংএখনও অত্যান্ত স্টাইলিশ ও এলিগ্যান্স । এই প্রিন্ট পোলকা, ডটস, স্ট্রাইপ, শেভ্রণ ও আরো অনেক প্যাটার্ণের সমন্বয়।
তাদের রঙিন ও আনন্দময় সংস্কৃতি প্রাণিত এই প্রিন্ট আধুনিক যুগে প্রথম দেখা যায় ২০০৯ সালে ম্যাথু উইলিয়ামের সামার কালেকশনে। এরপর তা অনুসরণ করে মিসনি, এলএমবি এবং ডায়ান ভন ফার্স্টেনবার্গ। বেশ জটিল আর রঙিন এই প্রিন্ট সাহসী ফ্যাশনিস্তাদের জন্য একটি বিশেষ মনোভঙ্গিতে ডিজাইন করা। দিন কিংবা সন্ধ্যা উভয় সময়ের আউটফিট হিসেবে উপযুক্ত। প্রিন্টটির প্রধান বৈশিষ্ট এর সাহসী সব কালার কম্বিনেশন, প্রগাঢ় কালো আউট লাইন আর ত্রিভূজ ও বৃত্তের দৃঢ় শেপ। যেকোন ধরনের পোশাক চমৎকারভাবে হাইলাইট করে। তাই এখনো ডিজাইনাররা তাদের ফ্যাশন শোর জন্য এই ঐতিহাসিক মেক্সিকান প্যাটার্ণ বেছে নেন।
ফ্যাশনবিশ্বে অ্যাজটেক প্রিন্ট আধিপত্য বিস্তার করে মেথিউ উইলিয়ামসনের ২০০৯ স্প্রিং/সামার শোতে অভিষেকের পর। আর সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো কোনোরকম ব্যার্থতা ছাড়াই এই প্রিন্ট জারা, এইচ অ্যান্ড এমের মতো হাই অ্যান্ড ফাস্ট ব্র্যান্ডগুলো লুফে নিয়েছিলো।
ম্যারা হফম্যান ২০১২ এর সামার কালেকশন মাতিয়েছিলেন অ্যাজটেক প্রিন্ট দিয়ে। তবে এতে রঙের প্রাচুর্য নিয়ে আসেন ডায়ান ভন ফার্স্টেনবার্গ। আর মেক্সিকান ফ্যাশন মার্কেটের উত্থানের আলোয় অ্যাজটেক প্রিন্ট জায়গা করে নিয়েছে একেবারে সেন্টার স্টেজে। রানওয়েগুলোতেও তার ব্যতিক্রম ঘটেনি। এছাড়া ২০১৪ এর রিসোর্টে ছিলো অ্যাজটেক প্রিন্টের সনাতন প্রভাব। যা ক্লোভার ক্যানিয়নের লুজ প্যান্ট সেট ও লং জ্যাকেট সিলুয়েটের ওপর প্রয়োগ করা হয়েছিল। রিসোর্ট ২০১৪ এর জন্য একজোড়া ট্রাউজারের ওপর কোমল জিগজ্যাগ প্যাটার্ণ প্রিন্ট ডিজাইন করেছিলেন মিসনি। ব্যাস সেই থেকে শুরু। অ্যাজটেক প্রিন্ট ব্যাপকভাবে ফ্যাশন বিশ্বে তার জায়গা করে নেয়। প্রতি বছর অ্যাজটেক প্রিন্টের লেগিংস, জামা, স্কার্ট ও অ্যাকসেসরিজ ফ্যাশন মার্কেটে একটা উল্লেখযোগ্য অংশ দখল করে রাখে এর বর্ণিল প্যাটার্ণ আর ঐতিহ্যময়তায়।
এখন পর্যন্ত জনপ্রিয়তার শীর্ষে রয়েছে অ্যাজটেক প্রিন্টের লেগিংস। শুধু আবেদনময়তার জন্য নয় বিভিন্ন উপায়ে পরা যায় বলে ফ্যাশনে এগুলো পুরনো হয় না। যদি জিনসে একঘেয়েমি আসে, সেক্ষেত্রে মাত্র একজোড়া অ্যাজটেক প্রিন্টের লেগিংস আপনাকে নতুনত্ব এনে দেবে। এটি বেশ ফ্ল্যাক্সিবলও। এর সঙ্গে লং টি-শার্ট, কার্ডিগান, টপস আর ফ্ল্যাট বা হিল জুতা মানিয়ে যাবে চমৎকারভাবে।
এছাড়া এখন বাজারে এই প্রিন্টের স্কার্ট, জামা, জুতাসহ বিভিন্ন অ্যাকসেসরিজের দেখা মিলবে। ডেনিম ও সলিড কালারের সঙ্গে বেশ ভালো মানায়। আর তার সঙ্গে লেদার বা পালকের অ্যাকসেসরিজ এনে দেবে বোহেমিয়ান লুক। অনেকে আবার নেইল আর্টেও এই প্রিন্টের ব্যবহার করে থাকেন। রঙের প্রাচুর্যে ভরা এই ট্রাইবাল থিম সহজে যে কারো মনোযোগ আকর্ষণ করে। স্টাইল স্টেটমেন্টে ভিন্নতা আনতে চাইলে অ্যাজটেক প্রিন্ট হতে পারে আপনার জন্য যুতসই উপায়।