মনের যত্ন
সুন্দরের প্রকাশ মন থেকেই। তাই মনের পরিচর্যা জরুরি। এর প্রধান এক উপায় মেডিটেশন
যে সৌন্দর্য আমরা প্রকাশ্য হতে দেখি, তার উৎস আমাদের ভেতরে। মানে, দেহের অভ্যন্তরে। একে জাগিয়েই সুন্দর হয়ে উঠি আমরা। আর এর সবচেয়ে ভালো মাধ্যম হলো মেডিটেশন। নিজেকে সুন্দর রাখার প্রশান্তিকর উপায়।
এটা সবারই জানা, মানসিক চাপ, অস্থিরতা, ক্লান্তি ও বিভিন্ন ধরনের সমস্যা শারীরিক সক্ষমতা ব্যাহত করে। এর বাহ্যিক প্রভাবও ব্যাপক। বিভিন্ন শারীরিক জটিলতা তো আছেই, সঙ্গে চোখের নিচে কালো দাগ, বলিরেখা এমনকি ত্বক নিষ্প্রাণ হয়ে পড়াসহ মলিন ভাব দেখা দেবে। চুলও ঝরতে শুরু করবে। তাই যতোটা সম্ভব নিজেকে, মানে নিজের মনকে নিয়ন্ত্রণে রাখার চেষ্টা করা উচিত। আর এর সবচেয়ে ভালো উপায় হলো মেডিটেশন বা ধ্যান।
এটা এতটাই সহজ আর স্বাভাবিক যে, কোনো বাড়তি আয়োজনের দরকার হয় না। বাসায় অপেক্ষাকৃত শান্ত রুমে, ছাদে, বারান্দায়, বাগানে কিংবা যেকোনো নিরিবিলি জায়গায় মেডিটেশন শুরু করা যায়। এ সময় খুব আঁটোসাঁটো পোশাক বাদ দিয়ে আরামদায়ক ঢিলেঢালা পোশাক পরে নিতে হবে। শুরুর আগে যেকোনো কাজ বা ব্যস্ততা দূরে রাখতে হবে। নতুবা পরিপূর্ণ মেডিটেশন সম্ভব হবে না। এটি মূলত মনকে একটি স্থির অবস্থায় নিয়ে আসে। তাই প্রয়োজন নেই কোনো নির্দিষ্ট নিয়ম বা পদ্ধতির। যেভাবে সহজ বা আরাম হয়, সেভাবেই মনকে স্থির করার চেষ্টা করতে হবে। তবে কোমর, কাঁধ, মাথা একই সরলরেখায় থাকবে। বিশেষ করে পিঠ ও শিরদাঁড়া সোজা রেখে যেকোনো ভঙ্গিতে বসা যাবে। চোখ বন্ধ করে মনোযোগ দিন শ্বাস-প্রশ্বাসের ওপর। তবে তা নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা না করে স্বাভাবিক রাখুন। খেয়াল করার চেষ্টা করুন, কীভাবে বাতাস নাকের ভেতর দিয়ে ফুসফুসে যাচ্ছে আবার বেরিয়ে যাচ্ছে। এটি মেডিটেশনের বেশ গুরুত্বপূর্ণ অংশ। এরপর মনোযোগ দিন আপনার চারপাশের শব্দের ওপর। হালকা কোনো মিউজিকও বাজাতে পারেন। মনঃসংযোগ করতে কল্পনা করতে পারেন পছন্দের কোনো জায়গা, সেখানকার শব্দ, গন্ধ। এসবের সঙ্গে মনকে ভাসিয়ে দিন। দেখবেন মন এক আশ্চর্য প্রশান্তিতে ভরে উঠছে। শেষ করবেন শ্বাস-প্রশ্বাসকে ধীরে ধীরে হালকা করে। মনে রাখতে হবে ক্লান্ত, দুর্বল বা অসুস্থ শরীর মেডিটেশনের জন্য উপযুক্ত নয়। তাই সুস্থ হয়েই শুরু করতে হবে। পরিহার করুন প্রয়োজনের অতিরিক্ত খাবার ও ঘুম।
মেডিটেশন নিয়ে আছে নানান মিথ। তবে এটি অলৌকিক কোনো ব্যাপার নয়। মনোজাগতিক স্থিরতা আনার জন্য এক দারুণ কার্যকর মানসিক ব্যায়াম। যেকোনো পরিস্থিতিতে নিজেকে শান্ত রাখতেও এটি সাহায্য করতে পারে। ফলে অনেক শারীরিক সমস্যা থেকে দূরে থাকা সম্ভব হয়। চেহারায় সেই প্রভাব পড়ে, ফলে তা প্রশান্ত দেখায়। বিভিন্ন গবেষণায় প্রমাণিত হয়েছে, মেডিটেশন তারুণ্য ধরে রাখতেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে। শুরুতে মনঃসংযোগ করাটা একটু কঠিন মনে হবে। তাই প্রথমে ষাট সেকেন্ড দিয়ে শুরু করতে পারেন। দু’দিনে একবার।
বিভিন্ন ধরনের মেডিটেশন রয়েছে। তবে ব্রিদিংটাই সহজ এবং এটা দিয়ে শুরু করতে হয়। যারা অনেক ব্যস্ত থাকেন, তারা প্রতিদিন অন্তত চার থেকে পাঁচ মিনিট মেডিটেশন করলেই যথেষ্ট। শুরু করার সবচেয়ে ভালো সময় হচ্ছে রাতে ঘুমাতে যাবার আগে ও সকালবেলা। ঘুমের পর মন বেশ সতেজ থাকে, তাই এই সময়টায় হলে বেশি ভালো।
এটি এমন এক প্রক্রিয়া, যা মানসিক স্বাস্থ্য ভালো রাখতে বেশ কার্যকর ভূমিকা রাখে। স্বাভাবিকভাবেই চেহারায় এর প্রতিফলন ঘটে। মানসিক স্থিরতা আসার ফলে খাওয়া, ঘুম, চলাফেরাসহ প্রাত্যহিক অন্যান্য আচরণে আসবে স্বাভাবিক নিয়ন্ত্রণ। ফলে শরীর বেশির ভাগ সময় ভালো থাকবে। ঘুম, পরিপাকক্রিয়া থেকে যা কিছু, সবই দেহঘড়ির স্বাভাবিক নিয়মে চলবে। ত্বক, চুল ভালো থাকবে। মন হবে ফুরফুরে। ফলে আচরণও সুন্দর হয়ে উঠবে।