লিপ ট্যাটু
মুখসৌন্দর্যের একটি উল্লেখযোগ্য অংশ জুড়ে আছে ঠোঁট। ঠোঁটের সাজে কাল ভেদে এসেছে নানা উপচার। মেসোপোটেমিয়ান নারীদের ঠোঁট রাঙাতে ব্যবহাহৃত দামী পাথরের গুঁড়ো থেকে হালের লিপস্টিক। এর সঙ্গে লিপগ্লস, গ্লিটারসহ বিভিন্ন উপকরণ। আর সময়ের সবচেয়ে জনপ্রিয় ট্রেন্ড লিপ ট্যাটু
লিপ ট্যাটুর প্রচলন
ট্যাটু বা উল্কি শতাব্দির পর শতাব্দী ধরে অসাধারণ শিল্পকর্ম হিসেবে বিবেচিত। ভিষণ ট্রেন্ডি এই ট্যাটুর ধারণাটি কিন্তু মোটেও নতুন নয়। একসময় শরীরের বিভিন্ন অংশে ট্যাটু আঁকানো হতো ধর্মীয় কারণে। এর উৎপত্তি হয় ভূমধ্যসাগরীয় অঞ্চলে। অনেকে মনে করেন লিপ ট্যাটু একটি আধুনিক ধারণা। তা একেবারেই ভুল। কারণ এটি বডি আর্টের এটি প্রাচীন ফর্ম, আদি সাজের পদ্ধতি যা নারীদের মধ্যে বেশি ব্যবহৃত। তবে লিপ ট্যাটুর ধারণাটি উৎকর্ষতা পেয়েছে উত্তর আমেরিকায়। চোরাই ঘোড়া থেকে আলাদা করার জন্য মালিকরা তাদের ঘোড়ার মুখে ট্যাটু আঁকিয়ে নিতো। থরফব্রেড রেসিং প্রটেক্টিভ ব্যুারো ১৯৪৭ সালে এটি শুরু করে। এবং তখন রেসিং ঘোড়ার ঠোঁটে ট্যাটু আঁকা ট্রেন্ডে পরিণত হয়। পরবর্তীতে মেয়েরা একে কাজে লাগায় ঠোঁটের খুঁত ঢাকতে। বিশেষ করে ঠোঁট চওড়া বা পাতলা দেখাতে ট্যাটু আঁকা হতো। যা এখন কসমেটিকস ট্যাটু নামে পরিচিত। ধীরে-ধীরে এটি নারীদের মধ্যে প্রচলিত হয়েছে এবং এখনতো বলতে গেলে এটি ফ্যাশনের অপরিহার্য অংশ। ট্যাটুর জগতে লিপ ট্যাটু একটি আকর্ষক এবং জনপ্রিয় ট্রেন্ড। টিনএজদের মধ্যে এটি বেশ ভালোভাবেই গৃহীত। তবে বেশিরভাগ মেয়েরা এতে প্রাণিত হয় পছন্দের সেলিব্রেটি এবং ফ্যশন উইকগুলোর মেকআপে।
প্যাটার্ণ ও ডিজাইন
ট্যাটু অনেকটা গল্পের মতো। জীবনের স্মরণীয় মূহুর্তের কথা বলে এটি। যে কারো স্বপ্ন, আবেগ এবং প্রতিক্রিয়া বর্ণনা করা যায় ট্যাটুর সাহায্যে। এমনকি ভালোবাসা এবং বিশ্বস্ততাও। শিল্প পর্যায়ে পড়ার কারণে লিপ ট্যাটুর বিভিন্ন ধরন রয়েছে। তাই এটি বেশ স্বতন্ত্র এবং অনন্য। এছাড়া বোতাম, পিন আর রঙের সংযোজনে ট্যাটুতে আনা যায় ভিন্ন মাত্রা। ডিজাইনের পাশাপাশি পছন্দের তালিকায় রয়েছে শব্দ। কারো নাম কিংবা কোন বিষয় সম্পর্কিত একটি শব্দ ট্যাটু হিসেবে উৎকীর্ণ হয়। অনেকে মজার কোন ছবি বা শব্দও ট্যাটু হিসেবে বেছে নেয়। এক্ষত্রে পছন্দের তালিকার শীর্ষে রয়েছে প্রিয় মানুষের নাম। এর প্যাটার্ণ সাধারণত অনেক ছোট কিন্তু বেশ স্টাইলিশ এবং আকর্ষক। প্রথমদিকে কেবল গাঢ় রঙে লিপ ট্যাটু আঁকা হতো। এখন এতে যোগ হয়েছে বিভিন্ন রঙ।
ট্যাটু সম্পর্কে জেনে নিন
ট্যাটু করার আগে ভালো করে চিন্তা ও পরিকল্পনা করা বেশ জরুরী। কারণ এটি দীর্ঘ সময়ের জন্য ধারণ করে থাকতে হবে। আর ঠোঁটের মতো সংবেদনশীল অংশে এটি করানো বেশ ঝুঁকিপূর্ণও বটে। তাই ট্যাটু বাছাই করতেও বেশ সতর্কতা অবলম্বন করতে হয়। ট্যাটু আঁকা সম্পর্কিত তথ্য ভালোভাবে জেনে নেয়া দরকার। অবশ্যই কোন দক্ষ শিল্পীর কাছ থেকে আঁকিয়ে নেবেন। যাদের ওরাল কোন সমস্যা রয়েছে তাদের এটি না করানোই ভালো।
কৃত্রিম বা অস্থায়ী ট্যাটু
সহজে বিবর্ণ হয়ে যায় বলে ভালোভাবে এর যত্ন নেয়া আবশ্যক। তবে এতে হতাশ হবার কিছু নেই। করে নিতে পারেন অস্থায়ী বা কৃত্রিম ট্যাটু। এটি এখন সবচেয়ে বেশি জনপ্রিয়। এর বিকল্পও বিস্তর। বিউটি শপগুলোতে বিভিন্ন ডিজাইনের কৃত্রিম ট্যাটু পাওয়া যায়। ফ্লাওয়ার, এনিমেল, পলকা ডটস, গ্লিটার এবং স্ট্রাইপের ডিজাইন এখনকার ট্রেন্ড। এটি করে নেয়াও বেশ সহজ এবং স্থায়ী ট্যাটুর তুলনায় কম ব্যয়বহুল। স্টিকারের মতো এই ট্যাটু ব্যবহারের আগে ঠোঁটের আকার অনুযায়ী কেটে নিতে হয়। যদি একটু ভাইব্রেন্ট লুক আনতে চান ঠোঁটের আকার থেকে একটু বাড়িয়ে ট্যাটু লাগান। এরপর ওপরের স্বচ্ছ প্লাস্টিক তুলে ঠোঁটে মাপমতো বসিয়ে দিতে হবে। ভেজা তুলার সাহায্যে ত্রিশ সেকেন্ড পর্যন্ত চেপে-চেপে ট্যাটুটি বসিয়ে দিতে হবে। এরপর ওপরের কাগজটি তুলে নেবেন। থাকবে পাঁচ থেকে আট ঘন্টা। তবে আপনার যত্নের উপরও নির্ভর করবে এর স্থায়িত্ব। খাবারের তেল এবং অন্যান্য কসমেটিকস অয়েল দ্রুত এর ক্ষয় করে। তাই যতটুকু সম্ভব এগুলো এড়িয়ে চলুন। লিপস্টিকে যদি একঘেয়েমি আসে তবে এই অস্থায়ী লিপ ট্যাটু বা স্টিকার লিপ ট্যাটু হতে পারে পছন্দসই সমাধান। এর ফ্যাশনেবল ডিজাইন আর রঙ ঠোঁটে তৈরি করতে পারে স্বতন্ত্র প্যাটার্ণ। এছাড়া হাতেও এঁকে নেয়া যায় অস্থায়ী লিপ ট্যাটু। লিপস্টিক লাগানোর পর ঠোঁটের এক কোনে ছোট একটি ফুল, প্রজাপতি, পানির বিন্দু, হার্টচিহ্নসহ মজার-মজার ডিজাইন এঁকে নেয়া যায় সহজেই। তবে অবশ্যই খেয়াল রাখবেন যাই করুন না কেন তা যেন আপনার ব্যক্তিত্ব আর পোশাকের সঙ্গে মানিয়ে যায়। কারণ একএকটি ট্যাটু একেকধরনের অর্থ এবং বৈশিষ্ট্য প্রকাশ করে।
যত্ন
কিভাবে যত্ন নেবেন? এক্ষেত্রে স্থায়ী ট্যাটুর যত্ননেয়া একটু কঠিন। কারণ এধরনের ট্যাটু সাধারনত ঠোঁটের ভিতরের দিকে করা হয়। তাই অতিরিক্ত আর্দ্রতায় এটি বিবর্ণ হওয়ার সম্ভাবনা বেশি থাকে। এজন্য ট্যাটু শিল্পীর কাছ থেকে জেনে নিন কিভাবে এর যত্ন নেবেন। যতটুকু সম্ভব ট্যাটু আঁকা অংশটুকু শুকনো রাখুন চার থেকে পাঁচদিন। শুকনো রাখার জন্য ব্যবহার করতে পারেন পেপার টাওয়েল। ঠোঁট সবসময় পরিষ্কার রাখবেন। সামান্য ‘এ অ্যান্ড ডি’ ভিটামিন অয়েটমেন্ট ব্যবহার করা যেতে পারে। সোডা বা এই জাতীয় পানিয় পান করা যাবে না। অস্থায়ী ট্যাটু ব্যবহারের ক্ষেত্রে ঠোঁট শুকনো এবং পরিষ্কার রাখা জরুরী। যে কোন বিউটি প্রডাক্ট ব্যবহার থেকে বিরত থাকুন। দেখে নিন ট্যাটুটি নন-টক্সিক কিনা। এটি ওঠানোর জন্য ব্যবহার করুন মেকআপ রিমুভার অথবা অলিভ অয়েল।