সিরামিক-গহনায় নতুন শব্দ
![](https://beauty-pixel.com/wp-content/uploads/2023/09/c2.jpg)
গহনার নতুন ট্রেন্ড। সিরামিক জুয়েলারি। প্রাকৃতিক ও হাই-টেক জুয়েলারির অপূর্ব মেলবন্ধন। মেটেরিয়াল ও টেক্সচারের মিশ্রণ এবং সুন্দর ও সহজ উপস্থাপন সিরামিককে জুয়েলারির অন্যতম জনপ্রিয় উপকরণে পরিণত করেছে
![](https://beauty-pixel.com/wp-content/uploads/2023/09/c1.jpg)
মার্জিত ও নিবিড়তা, দামী বা কম দামী পাথর উপস্থাপনের চমৎকার ব্যাকড্রপ তৈরি করে আবার সোনা কিংবা রূপার সঙ্গেও চমৎকার মানিয়ে যায়। সিরামিক, গয়নার জগতে বেশ পুরনো হলেও নতুন রূপে উপস্থিত হয়েছে।
![](https://beauty-pixel.com/wp-content/uploads/2023/09/c3.jpg)
![](https://beauty-pixel.com/wp-content/uploads/2023/09/c2.jpg)
উপকরণ হিসেবে মানুষ সবসময় কাদামাটির প্রতি মুগ্ধ হয়েছে। আমাদের পূর্বপুরুষদের ধারণা ছিলো কাদামাটির বুদ্ধিপ্রসুত নকশা কোনোভাবে সৃষ্টির ক্রিয়াকে পুনঃরৎপাদন করে। ওল্ড টেস্টামেন্ট অনুসারে ঈশ্বর মানুষকে মাটি থেকেই সৃষ্টি করেছেন। আর এমন অপূর্ব সৃষ্টি কি হতে পারে? কাদামাটি দিয়ে যে কোনো ডিজাইন করে নেয়া যায়। সিরামিক বা চিনামাটি প্রচীনতম সিন্থেটিক উপকরণ হিসেবে মানুষের কাছে পরিচিত। সবচেয়ে পুরনো আবিষ্কারটি দশ হাজার বছরেরও আগের। মজার ব্যাপার হলো মানুষ প্রথম এই কৌশলটি ব্যবহার করেছিলো খাদ্য গ্রহণের ও রান্নার জন্য। তবে আমাদের পূর্বপুরুষেরা দ্রুত মাটিতে শিল্পকর্ম তৈরির বহুমুখী সম্ভাবনা ও প্রক্রিয়া গ্রহণ করেছিলেন।
![](https://beauty-pixel.com/wp-content/uploads/2023/09/c4.jpg)
দৈনন্দিন জীবনে ব্যবহৃত তৈজসপত্র,টাইলস,শৌখিন পণ্য তৈরির পাশাপাশি চিনামাটির গয়নাও অন্তর্ভূক্ত হয়। একই নাম হওয়া সত্বেও গহনা মৃৎশিল্প এবং টালি, তৈজসপত্রের মৃৎশিল্প একেবারে আলাদা জিনিস। একটি সিরামিক পণ্য তৈরিতে গ্রাইন্ডিং ও পলিশিংসহ ত্রিশটি পর্যায়ের মধ্য দিয়ে যেতে হয়। এতে পণ্যটি বহুবছর চকচকে ও সূক্ষ থাকে। হালকা ওজন, বাহ্যিক প্রভাবের প্রতিরোধ, কমনীয়তা ও স্থায়িত্বের জন্য জুয়েলার্স ও ওয়াচমেকাররা উপকরণটি বেশ পছন্দ করেন।
![](https://beauty-pixel.com/wp-content/uploads/2023/09/c5.jpg)
ফর্ম ও কালার নিয়ে কাজ করার সম্পূর্ণ স্বাধীনতা যা গয়না প্রস্তুতকারকদের জন্য বেশ আকর্ষনীয় ব্যপার। সিরামিক জুয়েলারির ডিজাইনের সর্বোচ্চ মান, টেকসই গুণমান ও মৌলিকত্ব যে কাউকে সন্তুষ্ট করবে। পেইন্ট ও গ্লেজিং ব্যবহার করে অসংখ্য ইফেক্ট ব্যবহার করা সহজ। তাই এটি নিয়ে ব্যাতিক্রমী সব ডিজাইনের কাজ করার আনন্দ পাওয়া যায়।
![](https://beauty-pixel.com/wp-content/uploads/2023/09/c6.jpg)
![](https://beauty-pixel.com/wp-content/uploads/2023/09/c7.jpg)
সিরামিকের অনেক ফর্ম রয়েছে। সবচেয়ে নিখুঁত ফর্মটি হলো হাই-টেক সিরামিক। স্বর্ণকার ও ডিজাইনারের একটি তরুণ দল একটি অসাধারণ রিং কালেকশনের মূল উপাদান হিসেবে এই মডার্ণ মেটেরিয়ালটি প্রদর্শন করে। আর এই কাজের সূত্র ধরে সেরিকো সিরামিক কালেকশন ক্রমশ জনপ্রিয় হতে থাকে। তারা আসলে একটি কালেকশনের জন্য এমন একটি জুয়েলারি মেটেরিয়াল খুঁজছিলো যা কালো হবে এবং হীরা ও অন্যান্য রঙিন রত্নের সঙ্গে আকর্ষণীয় বৈপরিত্য তৈরি করতে পারবে। মূল ধারণাটি ছিলো আর্ট ডেকোর উপর ভিত্তি করে গয়না তৈরি করা। হাই-টেক সিরামিক দিয়ে গয়না তৈরির প্রচেষ্টা থেকে এই ধারণাটির জন্ম হয়েছিলো।
![](https://beauty-pixel.com/wp-content/uploads/2023/09/raku-c8.jpg)
![](https://beauty-pixel.com/wp-content/uploads/2023/09/raku-c9.jpg)
আরেকটি ফর্ম হলো রাকু সিরামিক। মুনস্টারের যোগ্য ডিজাইনার বার্ড মিলান স্ট্যাবার তার অসাধারণ সব গয়না তৈরিতে জাপানী রাকু সিরামিক ব্যবহার করেন। চায়ের কাপ তৈরির জন্য রাকু প্রথম জাপানে বিকশিত হয়েছিলো ষোল শতকের দিকে। সম্রাট উদ্ভাবককে রাকুর সন্মানসূচক চোজিরো উপাধিতে ভূষিত করেন। এই প্রক্রিয়ায় অবজেক্টগুলো প্রধানত হাতে তৈরি হয়। শুকানোর পর এগুলো ৮৫০ থেকে ৯৫০ ডিগ্রি তাপে পোড়ানো হয়। এরপর এগুলো নিম্ন গলনাঙ্কে বিশেষ এই রাকু গ্ল্যাজিং দিয়ে ডেকোরেশন করা হয়। আসল অ্যাডভেঞ্চারটা হয় রাকু পোড়ানোর সময়। পোড়ানোর আগে টুকরো বা তৈরি করা জিনিসটি ১০০০ ডিগ্রি তাপে উত্তপ্ত করা হয় যতক্ষণ না গ্ল্যাজিং গলে যায়।
![](https://beauty-pixel.com/wp-content/uploads/2023/09/c14.jpg)
সুবিধা ও বৈশিষ্ট্য
হাই-টেক সিরামিক গয়নার তৈরির জন্য আদর্শ ও এর অনেক সুবিধাও রয়েছে। আর রাকু সিরামিক গয়নায় যোগ করে আভিজাত্য।
হাইপোলার্জেনিক
এই রত্ন গুলি ধাতবে সংবেদনশীল লোকেরাও পরতে পারেন। সিরামিক পণ্যে অ্যালার্জিজনিত প্রতিক্রিয়ার শঙ্কা নেই বললেই চলে।
![](https://beauty-pixel.com/wp-content/uploads/2023/09/c13.jpg)
স্থায়িত্ব
প্রথম দেখায় ভঙ্গুর মনে হলেও সিরামিক আসলে একটি টেকসই পরিধান-প্রতিরোধী মেটেরিয়াল। কুকিংয়ের সময় একটি সিরামিক পণ্য যে বিশেষ আবরণ প্রাপ্ত হয় তা নীলচে স্ফটিক প্রতিরোধের ক্ষমতা রাখে। মোহস হার্ডনেস স্কেলের দশ পয়েন্টের মধ্যে সম্মানজনক নয় পয়েন্ট ফ্যাশন মেটেরিয়ালে বরাদ্দ হয়েছে। এর মানে হলো সিরামিক গয়নাগুলি ভেঙ্গে যাওয়ার সম্ভাবনা কম, স্ক্র্যাচ ও ঘষা লাগার ভয় নেই।
![](https://beauty-pixel.com/wp-content/uploads/2023/09/c15.jpg)
![](https://beauty-pixel.com/wp-content/uploads/2023/09/c16.png)
স্টাইলিস ও এলিগ্যান্ট
সোনা বা রূপার চাকচিক্য প্রায়শই সিরামিকের সুরুচিতা,সৌন্দর্যকে অনেকটা কমিয়ে দেয়ার চেষ্টা করে। শেডের বিস্তর পরিসর নতুন সম্ভাবনা এনে দেয়। তবু ক্ল্যাসিক ব্ল্যাক অ্যান্ড হোয়াইট এখনো ভীষণ ভালো লাগার। সিরামিক পণ্য বেশ সাদামাটা আবার জাঁকালোও হতে পারে, সহজ করে বলতে গেলে দৈনন্দিন বা বাণিজ্যিক চিত্রের পরিপূরক হতে পারে বা সান্ধ্যকালীন পোশাকের সঙ্গে অপূর্ব অ্যাক্সেসরিজ হতে পারে।
![](https://beauty-pixel.com/wp-content/uploads/2023/09/c11-1.jpg)
যত্ন
ইতোমধ্যেই আমরা জেনেছি সিরামিক একটি দৃঢ় ও টেকসই মেটেরিয়াল। এতে সহজেই অনুমেয় যে সিরামিক জুয়েলারি তার চকচকে উজ্জ্বলতা হারাবেনা, ঠিকঠাক যত্ন নিলে বহু বছর পরেও এর চাকচিক্য ও সূক্ষতা ঠিক থাকবে। ব্যবহারের সময় অবলম্বন করতে হবে কিছু সাবধানতার-
- সব ধরণের বিউটি ট্রিটমেন্ট নেয়ার পর সিরামিকের গয়না পরতে হবে।যদিও প্রসাধন সিরামিকের ক্ষতি করেনা, তবে উপরিভাগে পাতলা একটি আবরণ তৈরি করে যা গয়নাগুলো অস্বচ্ছ করে তোলে। তাই অসাবধানে লেগে গেলে গয়না থেকে প্রসাধন পরিষ্কার করে ফেলা দরকার
- ধোয়া বা পরিষ্কারের ক্ষেত্রে ওয়াশিং পাউডার, পেস্ট বা জেল এড়িয়ে যাওয়া উচিৎ। কেননা এ ধরণের কড়া বা ঝাঁঝালো রাসায়নিক সিরামিকের টপকোট ক্ষতিগ্রস্ত বা বিবর্ণ করে ফেলতে পারে
- সিরামিক জুয়েলারি এমন কোনো বক্সে সংরক্ষণ করা উচিৎ যাতে একটির সঙ্গে আরেকটি ঘষা না লাগে
এগুলো পরিষ্কার করারও কিছু নিয়ম রয়েছে। পরিষ্কার করে নিতে ব্যবহার করতে হবে নরম ভেঁজা কাপড়।একটি মাইক্রোফাইবার কাপড় বা একটি নরম লিন্ট-ফ্রি কাপড় দিয়ে শুকিয়ে নিতে হবে।