ট্রেন্ডি টেনড্রিলস
সুন্দর সবসময়ই নষ্টালজিক করে যে কাউকেই। জীবনে বারবার ফিরে পাওয়ার ইচ্ছে জাগে। তেমনি এক হেয়ারস্টাইল টেনড্রিলস, যা মুখশ্রীতে যোগ করে মায়াময়তা
অতীতের যা কিছু সুন্দর তা ফিরে পেতে কারনা ভালো লাগে। আর ফ্যাশন আর বিউটিতে অতীত বারবার ফিরে এসেছে। কখনো ভিন্ন আঙ্গিকে, কখনোবা ঠিক যেমন ছিলো তেমন করেই। তার মধ্যে আশি আর নব্বইয়ের ধারা বোধহয় সবচেয়ে বেশি বার এসেছে। নব্বইয়ের দশকে চুলের এই ট্রেন্ডের শুরু। বাথরুম থেকে গোসল শেষে বেরুবার সময় যেভাবে তাওয়েল দিয়ে উঁচু করে চুল বেঁধে নেয়া হয় অনেকটা সেরকম করে চুলটা বেঁধে নিয়ে কানের পাশ থেকে সরু দু’গাছি চুল বের করে দিলেন। অনেকটা লতার মতো। তাই অনেক ভেবে এই হেয়ারস্টাইলের ট্রেনন্ডিল নামকরণ হয়েছে।
সমবয়সী অনেকের মতোই অভিনেত্রী জেনিফার অ্যানিস্টন নব্বইয়ের দিকে টিনি টেনড্রিলসের ভক্ত ছিলেন এবং পনিটেল করে এই স্টাইলটি করে নিতেন। এর সঙ্গে তিনি সেসময়ের আরেকটি জনপ্রিয় মাস্ট-হ্যাভ স্টাইলিং অ্যাক্সেসরিজ বাটারফ্লাই ক্লিপ জুড়ে দিতেন। তবে বিশে এসে এই রুটটি অনুসরণ করতে হবেনা। কিন্তু আমরা সবাই জানি যে সম্প্রতি বাটারফ্লাই ক্লিপসহ বিভিন্ন ধরণের হেয়ার অ্যাক্সেসরিজ ট্রেন্ডে ফিরে এসেছে।
আয়নায় নিজের চেহারা দেখুন। যদি কিছ একুটা মিস করছেন এমন মনে হয় বা মনে হচ্ছে কি মুখের পাশগুলো স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি দুর্বল? কিংবা খালি খালি লাগছে? তবু মুখের আশপাশে চুল বের করে দিতে সাহস পাচ্ছেননা? এমনটা যদি হয়ে থাকে তবে আপনার জন্য ভালো খবর হলো ফেস-ফ্রেমিং ট্রেনডিলস ফিরে এসেছে। অনেক থ্রোব্যাক ট্রেন্ডের মতো ট্রেনডিলসও ট্রেন্ডে নতুন করে জায়গা করে নিচ্ছে এবং স্টাইলটি করে নেয়ার পর অনেকেই হয়তো প্রশ্ন করতে পারে কেন পনিটেলের সামনের দিকে দুটি স্ট্র্যান্ড টানা বন্ধ করেছিলেন।
নামকরা হেয়ারড্রেসার জেন আতকিন এই স্টাইলটি নিয়ে বেশ কিছু কাজ করেছেন,তার মতে টেনড্রিলে সহজে চেহারায় একটি চটকদার ভাব আনা যায়। আর কারদেশিয়ান ভক্তরা জানেন যে তারা যেকোনো জায়গায় যেতে জেনকে তাদের চাই-ই। এ বিষয়ে জেনের মত হলো অনুপ্রেরণার জন্য অতীতের দিকে তাকানোটাই ভালো। আর নব্বইয়ের দশক এক্ষেত্রে বিশাল ভূমিকা পালন করতে পারে বিশেষ করে সামনের দিকে টেনড্রিল পিস দিয়ে। জেন মনে করেন কম আনেক ক্ষেত্রে আনেক বেশি হয়ে ধরা দেয়। আর চুলে কৃত্রিম কিছু ছাড়া এফোর্টলেস, ন্যাচারাল স্টাইল কে না পছন্দ করে। স্টাইলটি গ্ল্যাম স্কোয়াডের সঙ্গে সহযোগীতা করার ক্ষেত্রে দুর্দান্ত। তবে চুলের বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেয়ার আগে আউটফিট ও মেকআপ লুক কী ধরণের তা দেখে নেয়া চাই। এই সিজনে টেনড্রিলস পুরোদমে ফিরে এসেছে। স্টাইলটি বেশ সুন্দর, আবেদনময় এবং চেহারার ফ্রেম তৈরি করে সুন্দরভাবে। পছন্দ মতো আপনি ছোট বা কিছুটা ভারি করে চুল নিতে পারেন আরো প্লেফুল লুক তৈরি করে নিতে এবং কানের পাশে বা হেয়ারলাইনের উপরের দিকে থেকেও চুল বের করে নিতে পারেন চেহারায় ভিন্নতা তৈরি করে নিতে।
এই স্টাইলটি অনেকেই আবার করে নিতে সাহস পাবেন না, তবে ঠিকঠাকভাবে স্টাইলটি করে নিলে এটি চ্যালেঞ্জিং লুকের চেয়ে হতে পারে আরও সহজ একটি নস্টালজিক হেয়ারডো। তাই নব্বইয়ের দশকের দিকে না তাকিয়ে এখন কীভাবে স্টাইলটি করে নেবেন সেটাই ভাবুন। জেনে নিন কীভাবে পুরনো এই হেয়ারস্টাইলকে আপডেট বা মডার্নাইজ করে নেয়া যায়। আপনি যদি টিনি টেনড্রিল করে নিতে খুব দ্বিদ্বায় থাকেন বা ভয় পান তবে ব্ল্যাঙ্কা মিরের মতো স্টাইলটি করে নিতে পারেন এবং চুল পেছনের দিকে ক্লিপ দিয়ে আঁটকে নিতে পারেন। তবে সামনের দিকে আরো ঘন করে চুল রেখে তারপর বেঁধে নিতে হবে। এটি হাই ম্যানটেনেন্স ছাড়াই বেশ মায়াময় হেয়ারস্টাইল তৈরি করবে।
যখন চুলের কালার নিয়ে অ্যাক্সপেরিমেন্ট করার কথা ভাবছেন বা একঘেয়েমি কাটিয়ে উঠতে চাইছেন তখন চুল নিয়ে খেলতে পারেন কোনো সহজ উপায়ে। কখনো কখনো হেয়ারস্টাইল দিয়েও ভিন্নতা আনা যায় সহজেই। কার্লি বা ওয়েভি চুল আয়রন করা থেকে একটু নাহয় দূরে থাকলেন। ন্যাচারাল টেক্সচারেই নাহয় চুল থাকলো কিছুটা সময়। যখন ন্যাচারাল হেয়ার স্টাইলিংয়ের কথা আসে তখন অতিরিক্ত স্টাইলিং বা কার্লি হেয়ার অতিরিক্ত প্রোডাক্টে ভরিয়ে তুলবেননা। তবে উঁচু করে বাঁধা পনিটেলের সঙ্গেই ফ্যাশন উইকগুলোতে টেনড্রিল স্টাইলটি বেশি করে নিতে দেখা যায়। এছাড়া মাথার উপরের দিকে চূড়া করে চুল বেঁধে নিলে বা আপডো করে নিয়ে কানের পাশ থেকে সরু করে চুল বের করে নিলে লুকে একটা স্নিগ্ধভাব আসবে।
প্রথমে চুল প্রস্তুত করে নিন স্টাইলটির জন্য। এক্ষেত্রে সুপারসোনিক হেয়ারড্রায়ার বা ও ওয়েভ স্প্রে ব্যবহার করতে পারেন। কার্লিং আয়রনের সাহায্যে কয়েক ভাগ চুল র্যাপ করে নিন। যখন এগুলো গরম হয়ে উঠবে তখন আলতো করে সেগুলো টেনে নিন। চুলের গোড়ার দিকে টেক্সচার ফোম ও টেকনো স্টিক প্রয়োগ করতে পারেন।
উঁচু করে পনিটেল বেঁধে বা যেকোনো হেয়ার বানের সঙ্গে কপালের দিকে টেনড্রিল পিস বের করে নিতে পারেন। কিংবা পেছনের দিকে কাছাকাছি দু’টি পনিটেল করে নিয়ে সেগুলো মেসি ফ্রেঞ্চ টুইস্টে র্যাপ করে নিন। চুল যাতে খুলে না যায় তার জন্য ফ্রেঞ্চ হেয়ার পিন দিয়ে আঁটকে দিন। দেখুন নিজেকে কতোটা ময়াময় লাগছে। যে চুল বের করে নেবেন তা হওয়া চাই টিছুটা নরম, মসৃণ এবং সামান্য হেয়ারস্প্রে যুক্ত।
যদি ভেবে থাকেন নব্বইয়ের ফিরে আসা শুধু চোকার নেকলেস, ক্রপ টপস ও ব্রাউন লিপস্টিকে সীমাবদ্ধ তবে ভুল হবে। কিন্ডেল জেনার এই ট্রেনড্রিলস স্টাইলকে ফিরিয়ে আনতে রীতিমতো মিশনে নেমেছিলেন এবং তিনি অবশ্যই সফল। কেননা অনেক সেলিব্রিটিই এই ট্রেন্ডটি ফলো করছেন। তবে এখন স্টাইলটি করে নিতে হলে রিং করে নেয়া বাদ দিতে হবে। কিন্ডেল জেনারকেতো টেনড্রিলসের কুইন বলা হচ্ছে। কর্ডি বি ফেয়ারওয়েল ব্যাকে ঠিকঠাক স্টাইলটি করেছিলেন। বেলা থর্নের হেয়ার ডো থেকে বেরিয়ে আসা নাজুক কার্লগুলো টেনড্রিল ট্রেন্ডের পরিপক্কতারই পরিচয় দিচ্ছিলো। এবার রিংলেটে ফিরে আসি। রিহানা এই রিংলেটেই স্টাইলটি করে নিয়েছিলেন।
এত বড় মাপের সেলিব্রিটিরা যখন স্টাইলটিতে এতো সহজে ফিরে যেতে সাহস করেছেন তাহলে আপনি কেন পিছিয়ে থাকবেন। নিজেকে পুরনো স্টাইলে নতুন করে ফিরে পেতে ফিরে যান টেনড্রিল হেয়ারস্টাইলে।