উদ্ভিজ্জ ত্বক চর্চা


অনেকেই খাবার গ্রহনের ব্যপারে বেশ সচেতন। শরীর ঠিক রাখতে সচেতন থাকাটা বেশ জরুরি। এমনকি শরীরের ভেতরের অঙ্গ বা অর্গানের যত্ন নিতেও আপ্রান চেষ্টা চালিয়ে যান। কিন্তু শরীরের সবচেয়ে বড় অর্গান সম্পর্কে? ত্বক নিয়ে ভেবেছেন কি?

আমাদের বাইরের ত্বকের একটি বড় কাজ হচ্ছে বাইরের পরিবেশ থেকে রক্ষা করা। এটি আমাদের শরীরের তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণ করে, ফ্লইড লেভেলের ভারসাম্য রক্ষা করে এবং সূর্যালোক থেকে সুরক্ষা দেয়। তাই ত্বকের গুরুত্ব দেয়া দরকার এবং ত্বকের স্বাস্থ্যেরও। তাই ত্বকের ঠিকঠাক যত্ন এবং স্বাস্থ্যকর অবস্থা নিশ্চিত করতে ত্বকের যত্নের রুটিনের সঙ্গে সঠিক পণ্য বেশ গুরুত্বপূর্ণ।
ত্বকের যত্নের অনেকগুলো উপায় রয়েছে, এরমধ্যে ভিটামিনের উপস্থিতি কম এবং উচ্চমাত্রার রাসায়নিক সমৃদ্ধ প্রচুর সিন্থেটিক পণ্যও যেমন রয়েছে তেমনি রয়েছে প্রাকৃতিক তেল ও অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট। তবে সেরাটি হলো অর্গানিক, প্ল্যান্ট-বেজড উপাদান বা পণ্য।


আমাদের ত্বক যতটা না সুরক্ষা দেয়াল তারচেয়ে বেশি ফিল্টার বা পরি¯্রাবক। পরিবেশগত দূষণ থেকে শুরু করে যেসব পণ্য ত্বকে প্রয়োগ করা হয় এটি তার সবই শোষণ করে। এজন্যই এটি নিশ্চিত করা জরুরি যে ত্বকের উপর এমন কিছু প্রয়োগ না করা যা শরীরের ভেতর কেউ দিতে চাইবে না। ত্বক সুস্থ্য রাখার জন্য ত্বকের যত্নের পরিকল্পনা করাটা নির্ভর করে ত্বকের জন্য সেরাটা কী তা বেছে নেয়ার উপর।



উদ্ভিদ-ভিত্তিক ত্বকের যতেœর পণ্য আসে প্রকৃতি থেকে এবং শরীরের উপর একই প্রাকৃতিক প্রভাব ফেলে। এগুলো বিশেষ উদ্দেশ্যে সংযোজিত বস্তু, কম কার্যকর অনেক ব্র্যান্ড দ্বারা ব্যবহৃত সস্তা বিকল্প এড়িয়ে চলে। প্ল্যান্ট-বেজ স্কিন কেয়ার প্রোডাক্ট নানান দিক থেকে ত্বকের ও শরীরের যত্ন নেয় একেবারে নিরাপদভাবে। যেমন অ্যান্টি অক্সিডেন্ট, এটি শরীর ও পরিবেশ দ্বারা উৎপাদিত ফ্রি র্যাডিকেলের সঙ্গে লড়াই করে শরীরের কোষগুলিকে পুনরজ্জীবিত করে এবং মজবুত করে।
ত্বকের সক্রিয়তা বজায় রাখাটা জরুরি। ভিটামিন কোষ মেরামতে সহায়তা করে এবং বয়সের ছাপ হ্রাস করতে সহায়তা করে। বয়সের ছাপ দূর করতে আরেকটি কার্যকর উপাদান হলো এসেনশিয়াল অয়েল। এটি ব্রণ কমাতে, শুষ্কতার বিরুদ্ধে লড়াই করতে, তৈলাক্ততা দূর করতে, ক্ষত মসৃণ করতে এবং ত্বকের স্থিতিস্থাপকতা বৃদ্ধি করতে সহায্য করতে পারে। ত্বকের স্থিতিস্থাপকতা বাড়াতে আরেকটি উপাদান বিশ্ময়করভাবে কাজ করে, সেটি হলো প্রোটিন। এটি ত্বককোষের দৃঢ়তা বাড়াতেও সমান কার্যকর। এসব কিছুই প্ল্যান্ট-বেজ উপকরণে পাওয়া সম্ভব।

তাই ত্বকের যত্নের পণ্যগুলো কীসের সেদিকে নজর দিন এবং নিশ্চিত করুন যে এগুলো কৃত্রিম উপদানে পূর্ণ নয়। অথবা তালিকা থেকে কৃত্রিম পণ্যের পরিবর্তে প্ল্যান্ট-বেজ কোম্পানীর পন্য বেছে নিন।
ফেলে দিন চাকচিক্যময় প্যাক করা পণ্যগুলি। যে পণ্যগুলো প্রাকৃতিক বা ন্যাচারাল শব্দটি প্যাকের উপর লাগিয়ে নেয় বিশেষ করে বড় স্কিন কেয়ার কোম্পানিগুলো, ভোক্তার মনোযোগ পাবার জন্য। আপনার খাবারের মতোই যেকোনো স্কিন কেয়ার প্রোডাক্ট কেনার আগে এর উপাদানগুলোর তালিকা দেখে নেয়া বা পরীক্ষা করে নেয়া প্রয়োজন। যদি সেই তালিকায় কৃত্রিম উপাদান থাকে কিন্তু পণ্যের গায়ে ন্যাচারাল শব্দটি লেখা তবে এমন পণ্য অবশ্যই পরিহার করুন।

স্বাস্থ্যকর ত্বক পুরো শরীরেরই অখন্ড একটি অংশ। আর প্ল্যান্ট-বেজ স্কিন কেয়ার প্রোডাক্ট ত্বকের স্বাস্থ্যের ব্যপারে সেরা উপায় হতে পারে। তাই ত্বকের যত্ন নিন সেরা আর সবচেয়ে ভালো প্রাকৃতিক বিকল্প দিয়ে এর পুষ্টিবিধানের মাধ্যমে। তা হতে পারে ভেগান, অর্গানিক ও নন-জিএমও ফেস ও বডি প্রোডাক্ট।
তাই গাছপালা শুধু বড়ি বা অফিসের সৌন্দর্য বৃদ্ধির কাজে ব্যবহার না করে এটি নিজের সৌন্দর্য বৃদ্ধির কাজেও লাগান। প্ল্যান্ট-বেজ স্কিন কেয়ার চমৎকার ফলাফর প্রদান করতে পারে। ভালো দিক হলো, এগুলোর সক্রিয় উপাদান প্রকৃতিতেই পাওয়া যায়। যেমন, সানবার্নে আক্রান্ত হলে অ্যালোভেরা জেল হতে পারে এথেকে পরিত্রাণের উপায়। এছাড়া ক্লারিনস প্ল্যান্ট-বেজ স্কিন কেয়ার ধারণার প্রতি বেশ অনুগত। এমনকি ক্লারিনস ফেস ট্রিটমেন্ট অয়েল পঞ্চাশ বছর আগে এসেছিলো এবং শতভাগ বিশুদ্ধ উদ্ভিজ্জ নির্যাস দিয়ে তৈরি হয়েছিলো। এখনো সেই ঐতিহ্য ডাবল সিরামের মতো পণ্যে দৃঢ়ভাবেই রয়েছে। যা প্যাকড হয়েছে বয়স-বিরোধী নির্যাস দ্বারা। এখন বেশ সচেতন মানুষ। তারা প্রকৃতির সবুজ বন্ধুদের সীমাহীন উপকারিতা উদ্ভাবনে নেমেছে ভালোভাবেই এবং এটি বের করার চেষ্টা করছে যে কীভাবে তারা প্রাকৃতিক ত্বকের চর্চার সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত।

এনভায়রনমেন্টাল ডিফেন্স জানায় যে সকালে নাস্তার আগে মানুষ পনেরটিরও বেশি পারসোনাল কেয়ার প্রোডাক্ট ব্যবহার করে যাতে এক শটির মতো বিষাক্ত উপাদান রয়েছে। টুথপেস্ট থেকে শুরু করে মাসকারা, কনসিলার, ফেসক্রিম এমন আরো অনেক প্রোডাক্ট রয়েছে যা ক্ষতিকর উপাদানে পূর্ণ। এসব পণ্যের উপাদানের তালিকাটি পড়ে নেয়া প্রয়োজন এটি বোঝার জন্য যে কতটা একজন কতটা দ্রুত টক্সিক যুক্ত হতে পারে।
আপনার ত্বক আপনার সবচেয়ে বড় অর্গান। আমরা অনেক কিছুই ত্বকে প্রয়োগ করি রক্তপ্রবাহে তা শোষিত হওয়ার জন্য। একসময় তা আপনার শরীরে প্রবেশ করে বিষাক্ত রাসায়নিকসহ এবং হরমোন হ্রাসসহ নানান উপায়ে শরীরের ক্ষতি করতে পারে। যেমন, শ্বাস যন্ত্রের উপর প্রভাব ফেলতে পারে, প্রজনন পদ্ধতিতে ক্ষতি সাধন করতে পারে। যদি কেউ সিন্থেটিক কেমিক্যালে পূর্ণ পণ্য ব্যবহার করে তাহলে সে নিজেকে প্রতিদিন সম্ভাব্য স্বাস্থ্য সমস্যা ও বিষাক্ততার মধ্যে ঠেলে দিচ্ছে।

দেখা যায় যে, বেশিরভাগ বিউটি ব্র্যান্ড তাদের উপাদান নিয়ে বেশ গর্বিত থাকে এবং দেখাতে চায় তাদের পণ্যের ভেতর কী আছে। এতে শুধু অনুমানের উপর ভর করার প্রয়োজন হয়না যে ত্বকের সঙ্গে আসলে কী হতে যাচ্ছে। বরং পণ্যে কী আছে তা প্রকাশিত হলে ভোক্তা তার ত্বকের জন্য কী পেতে যাচ্ছেন তা ঠিকঠাক জানতে পারবেন। যদি কারো ত্বক স্পর্শকাতর বা এলার্জিযুক্ত হয় তবে তার জন্য একটি পণ্যে ঠিক কী কী উপাদান রয়েছে তা ঠিকঠাক জানাটা আরো বেশি প্রয়োজন।
আমরা ফল ও সবজী খেয়ে থাকি শুধু যে এগুলো খেতে মজাদার তার জন্য নয়, এগুলো স্বাস্থ্যের জন্যেও ভালো। প্ল্যান্ট-বেজ বিউটি প্রোডাক্ট উদ্ভিদের প্রাকৃতিক গুণাবলীকে পণ্যে একত্রিত করে এবং তা ত্বক আকর্ষনীয়, গর্জাস করে তুলতে ব্যবহৃত হয়। পুষ্টিউপাদান, ফ্যাটি অ্যাসেনশিয়াল এসিড এবং অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট অনেক প্ল্যান্ট-বেজ স্কিন কেয়ার প্রোডাক্টে পাওয়া যায়। এগুলো ত্বকের স্বাস্থ্য ভালো রাখতে কার্যকর ও নিরাপদ।