Beauty Hair Care

ব্রাইডাল হেয়ার

বিয়ে এখন রীতিমত উৎসব। বেড়েছে উৎযাপনের সময়সীমাও। তাই বর-কনেকে নিতে হয় বেশ কয়েকদিনের সাজসজ্জার প্রস্তুতি। বিশেষ করে হেয়ার স্টাইল নিয়ে ভাবতে হয় বেশ কিছুদিন আগে থেকেই। জেনে নেয়া যাক সেই প্রস্তুতিরই অদ্যোপান্ত

 একটা সময় দিনটি নিয়ে অত চিন্তা-ভাবনার তেমন কিছু ছিলোনা। এখন এনিয়ে বিস্তর ভাবতে হয়। কেননা এখন এটি রীতিমতো উৎসবে পরিণত হয়েছে আবার আয়োজনের পরিধিও ব্যপক। হচ্ছে বিয়ের কথা। আগে বিষয়টি দু’তিনদিনের হলেও এখন তিন থেকে চারদিনে ঠেকেছে। এছাড়া আংটি বদলের প্রারম্ভিক দিনটিতো আছেই। যেহেতু এই দিনগুলোতে বর-কনের দিকেই সবার দৃষ্টি থাকে তাই তাদের লুকটাও হওয়া চাই দৃষ্টিআকর্ষক। বিশেষ করে বিয়ের কনে এনিয়ে বেশ চিন্তায় থাকেন, তাকে দিনগুলোতে কেমন দেখাবে, কোন পার্লারে সাজবেন, হেয়ার স্টাইল কেমন হবে এমন নানান চিন্তা। আজকাল বিয়ে পড়ানোর কাজটিও আংটি বদলের দিন সেরে ফেলা হয় কিছুটা ছোট পরিসরে। তারপর দু’পক্ষের সুবিধামতো সময়ে বড় অনুষ্ঠানের তারিখ নির্ধারণ হয়। ফলে বেশ কিছুটা সময় পাওয়া যায় নিজেকে তৈরি করে নেয়ার। অনেকেই ভাবেন তৈরি করে নেয়ার কিছু নেই, পার্লারে গেলেই সুন্দর করে সাজিয়ে দেবে বিয়ের দিন।

এই সুন্দর করে সাজিয়ে দেয়ার জন্যই নিজেকে প্রস্তুত রাখা প্রয়োজন। তা নাহলে যতই সাজুন না কেন ভালো দেখাবেনা। এছাড়া ঘরোয়া আয়োজনগুলোতে যখন থাকবেন তখনতো আর পার্লারের সাজ থাকবেনা। নিজের ত্বক, চুল ঠিকঠাক না থাকলে নিজেরই মনখারাপ হবে। এই সময়গুলির জন্যই নিজেকে প্রস্তুত করে নেয়ার প্রক্রিয়াটা শুরু করতে হবে আগে থেকেই। বিশেষ করে চুল। সেই দিনটির জন্য কী করা দরকার তা ভেবে নিতে হবে বেশ কিছু সময় আগে থেকেই। যাতে দিনটির জন্য আপনার চুল ঠিকঠাক তৈরি থাকে। চুল ঠিক থাকলে তাতে যেকোনো ধরণের স্টাইল করে নেয়া যায়। আবার স্বাস্থ্যোজ্জ্বল চুল হলে তা ছেড়ে রাখলেও ভালো দেখায়। তাই জেনে নেয়া চাই শাইনি, হেলদি পিকচার-পারফেক্ট চুল পেতে কী করা প্রয়োজন।

হাতে যদি বেশ কয়েকমাস সময় থাকে তবে ছয় থেকে তিন মাস আগে থেকে তৈরি হওয়া শুরু করে দিন। বিয়ের দিনটিতে নিজেকে বেস্ট দেখাতে ও ফিল করতে চুলের একেবারে গভীর থেকে প্রস্তুত প্রক্রিয়া শুরু করাটা জরুরি। সুন্দর, আকর্ষনীয় চুল পেতে ভালোবাসা ও একনিষ্ঠতা দরকার। চুল ভালো দেখাতে হলে আগে ভেতর থেকে মেরামত শুরু করতে হবে। ভিটামিনের ঘাটতির কারণে চুল নিস্তেজ ও ভঙ্গুর হতে পারে। আর এমন চুল বিয়ের দিনগুলোতে কেউই চায়না। কয়েকটি সাপলিমেন্ট বা পরিপূরক খাবার গ্রহন এই জটিল ট্র্যান্ডগুলিকে অতীতের বিষয়ে পরিণত করবে। স্বাস্থ্যসম্মত চর্বিযুক্ত প্রোটিন এবং সবুজ শাক-সবজিসহ সুষম খাদ্য দেবে স্বাস্থ্যোজ্জ্বল চুলের নিশ্চয়তা। খাদ্য তালিকায় রাখুন তাজা ফল, বাদাম ও শস্য জাতীয় খাবার। বিশেষজ্ঞরা মনে করেন ভিটামিন বি সমৃদ্ধ খাবার মলিন চুলকে উজ্জ্বল করে তুলবে আর নিস্তেজ চুল আসলে ভিটামিন বি এর অভাবের লক্ষণ। আভাকাডো, বাদাম, স্পিরুলিনা, ডিম ও কুইনোয়ায় ভিটামিন বি রয়েছে। এটি চুল ঘন রাখতে, বৃদ্ধিতে ও ভঙ্গুরতা রোধে সহায়তা করে। জিঙ্ক চুলের পাশাপাশি ত্বক ও নখের জন্যেও ভালো। মুরগী, বাদাম, দইয়ের মতো খাবারে প্রচুর জিঙ্ক রয়েছে। চাইলে মাল্টিভিটামিন ও মিনারেল সাপলিমেন্টও নেয়া যেতে পারে।

তিন মাস বাকী আছে এমন সময়টা হেয়ার ট্রায়ালের জন্য বেশ ভালো সময়। স্যালন এক্সপার্টরাও বিয়ের কমপক্ষে তিন মাস আগে ফার্স্ট সেশন শুরু করার পরামর্শ দেন। খোঁজ নিন ট্রেন্ডি, আকর্ষনীয় ব্রাইডাল হেয়ারস্টাইলের। অথবা পছন্দের কোনো প্রফেশনালের কাছেও যেতে পারেন। সিলেক্টেড বা পছন্দের হেয়ার ড্রেসারগুলোর একটিতে হেয়ার ট্রায়াল দিয়ে নিতে পারেন। এই প্রক্রিয়াটি কাক্সিক্ষত স্টাইল, কালার ও লেন্থ পেতে সহায়তা করবে। সাধারণত মাথায় পরার যেকোনো উপকরণ বা অলঙ্করণ অবশ্যই আগে থেকে পরীক্ষা করে নেওয়া উচিৎ। এছাড়া চুল বাড়াতে চাইলে চুল কাটতে হবে। ঘাবড়ে গেলেন? চুলের শেষ প্রান্তের কথা বলা হচ্ছে। ফেটে যাওয়া চুলের ডগা বিয়েতে বিঘ্ন ঘটাবেনা এই প্রক্রিয়া তা নিশ্চিত করেবে, উৎকট লুক এড়াতে সহায়তা করবে যা কোনো বিয়ের কনেই চাননা। নিয়ম করে চুলের ডগা ট্রিম করে নিন। চুল ভেঙ্গে যাওয়া ও ডগা ফাটা যত কমবে বিয়ের দিনটি ঘনিয়ে আসতে আসতে চুল কাটাও কমাতে হবে।

যদি নতুন হেয়ার কালার টেস্ট করতে চান এখনই তা করে নেয়ার সময়। যদি কালারটি আপনার পছন্দ না হয় তবে এটি পরিবর্তন করার বা চুল বাড়তে দেয়ার জন্য আপনার যথেষ্ট সময় রয়েছে। ভালো হয় হেয়ারড্রেসারকে  ছয় থেকে আট-সাপ্তাহিক ট্রিম ও কালারের জন্য বুক করে নিলে। তবে ফাইনাল কালারটি দেবেন বিয়ের দু’সপ্তাহ আগে। এতে চুল ফ্রেশ আর ভাইব্রেন্ট দেখাবে। এসময় একটি ভালো শ্যাম্পু ও কন্ডিশনার ব্যবহার করাও গুরুত্বপূর্ণ। কড়া রাসায়নিক যুক্ত শ্যাম্পু যা চুলকে শুষ্ক ও নিস্তেজ করে তোলে সেগুলো এড়িয়ে চলা উচিৎ সবসময়। ব্যবহার করুন ডিটক্সিন শ্যাম্পু যা চুলকে আরো সতেজ ও পরিষ্কার করবে। সাপ্তাহিক হেয়ার রুটিনে যোগ করুন ডিপ কন্ডিশনিং মাস্ক। বেছে নিতে পারেন একটি প্রোটিন-বেসড ট্রিটমেন্ট। এটি প্রয়োগের পর ভালো করে চুল আঁচড়ে নিয়ে হট টাওয়েলে মুড়ে রাখুন। এই প্রক্রিয়া শাইনি ও হেলদি চুল পেতে চমৎকার কাজ দেয়। শিয়া বাটার ও অর্গান অয়েল সমৃদ্ধ হেয়ার প্যাকও ভালো কাজ দেবে। এটি চুলকে দৃঢ় ও পুষ্ট করে তুলবে ভারি বা ডাউন করা ছাড়াই।

সময় যখন এক মাস বাকি, এটাই রঙিন হওয়ার সেরা পর্যায়। গাঢ় চুল পেতে পোশাকের সঙ্গে মানানসই হাইলাইট করে নিতে পারেন দু ইবা তিন টোন যা চুলকে একটা গভীর ভাব ও ভলিউম যোগ করবে। আপনার হেয়ারস্টাইলিস্টের সঙ্গে কথা বলে মুখের শেপের সঙ্গে মানানসই হেয়ার কাট নিয়ে নিতে পারেন। তবে হেয়ার কাটে বড় কোনো পরিবর্তন করতে যাবেননা। কারণ তা যদি আপনার মুখাবয়বের সঙ্গে মানিয়ে না যায় এই পর্যায়ে তা শুধরে নেয়ার পর্য়াপ্ত হাতে নেই। সময় চুলের ফেটে যাওয়া ডগা ও অবিন্যস্ত চুল ট্রিম করে নিতে ভুলবেননা। জোর দিন অল্ট্রা-হাইড্রেটিং হেয়ার মাস্কের উপর। এটি ময়শ্চার ফিরে পেতে এবং চুলের গোড়া থেকে চুলের বৃদ্ধিকে উদ্দীপিত করতে সহায়তা করবে।

যদি সিদ্ধান্ত নিয়ে থাকেন যে চুল ডাউন বা হাফ-আপ করে রাখবেন তবে চুল যতটা সম্ভব হেলদি দেখানোর চেষ্টা করুন এবং তা করতে হবে হাতে দু’সপ্তাহ সময় থাকতে। স্যালনে গিয়ে নিয়ে নিন একটি ডিপ কন্ডিশনিং ট্রিটমেন্ট। এই ট্রিটমেন্ট চুলে আবরণই তৈরি করবেনা, এটি আসলে চুলের গ্রন্থিকোষে পুষ্টির বাড়তি চাহিদার যোগান দিতে উদ্দীপিত করে এবং হারিয়ে যাওয়া ময়শ্চার ফিরিয়ে আনে। যদি উঁচু করে চুর বেঁধে নিতে চান তবে ট্রিটমেন্টটি এড়িয়ে যেতে পারেন। এতে আপনার চুল আরও টেক্সচারযুক্ত হবে ফলে কাজ করা সহজ হবে। এসময় করে নিতে পারেন ওলেপ্লেক্স ট্রিটমেন্ট। এটি হেয়ার শ্যাফটের ভেতরে টিন্টিং, ডাইং ও হিট স্টাইলিংয়ের কারণে দুর্বল হওয়া ভাঙ্গা ডিসলফাইডের বন্ধনগুলি মেরামত করতে কাজ করে।

কাক্সিক্ষত দিনটির আগের দিনও নিজেকে কিছুটা সময় দিন। পছন্দের কন্ডিশনার দিয়ে একটি হোম ট্রিটমেন্ট দিতে পারেন। একটা এক্সট্রা গ্লসি ফিনিশের জন্য কোনো অর্গানিক হেয়ার অয়েলের সঙ্গে ম্যাসড আভাকাডো ও ডিমের কুসুম দিয়ে ঘরে তৈরি মাস্ক দিতে পারেন।

এবার ঝলমলে চুল নিয়ে মেতে উঠুন জীবনের জাঁকালো এই বিশেষ আয়োজনে। চুলের চাকচিক্য দীপ্তি ছড়াবে আপনার পুরো সাজ-সজ্জায়।

ছবি: ইন্টারনেট

Ahmed Bubli

Ahmed Bubli

About Author

Believing that a good life is built on balance, this individual is dedicated to helping others discover what truly brings them happiness. Whether you're a busy parent, a driven professional, or a dedicated student, their insights aim to support you in living your best life.

Leave a comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

You may also like

Beauty Makeup & Tips

অসহনীয় গরমে দেখাবে উজ্জ্বল আর দীপ্তিময় জমকালো কোনো সাজ ছাড়াই

বলা হয় সামার উৎফুল্লতায় পরিপূর্ণ- কিন্তু গলে যাওয়া মেকআপ, লেপ্টে যাওয়া আইলাইনার আর সুপার-স্টিকি লিপস্টিক এই প্রাণবন্ত সময়টাকে বিগড়ে দিতে
Beauty Makeup & Tips

বোল্ড মেকওভার

কেবল বাইরেই রঙের ছটা নয়, যা বের করে আনবে ভেতরের রঙিন অনুভূতিকেও। কিংবা এমন মেকআপ যা আপনার মনমরা মনোভাবকে করে