Beauty Skin Care

সৌন্দর্য চর্চায় সোনালি হলুদ

ধর্মীয় আচার-অনুষ্ঠান থেকে শুরু করে আয়ুর্বেদিক চিকিৎসায় এর ব্যবহার বহু প্রাচীন। ধারণা করা হয় ভারতেই এর ব্যবহার দুই হাজার বছরের পুরনো। প্রথম শতাব্দীর আয়ুর্বেদিক চিকিৎসায় হলুদের উল্লেখ আছে রক্ত পরিশোধনের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ উপাদান হিসেবে। প্রথম অবস্থায় কেবল রোগ নিরাময়ের কাজে ও রঙ হিসেবে এবং পরে মসলা হিসেবে এর ব্যবহার শুরু হয়। তবে বিভিন্ন ধর্মীয় আচার-অনুষ্ঠানে পবিত্রতার একটি অংশ হিসেবেই এর ব্যবহার বেশি। বিশেষ করে হিন্দু ধর্মীয় আচার-অনুষ্ঠান ও পোশাক রাঙানোর কাজে হলুদ অপরিহার্য উপাদান। উপমহাদেশে বিয়ের আগের দিন সন্ধ্যায় বর-কনেকে গায়ে হলুদ দেয়া হয় তাদের শুদ্ধ করার জন্য। এটি এখানকার ঐতিহ্যবাহী একটি রীতি। এটি নিয়ে অনেক মিথও প্রচলিত আছে। মনে করা হয় হলুদ সমৃদ্ধি ও সৌভাগ্য বয়ে আনে। আর একারণেই বেশিরভাগ সনাতন ও সামাজিক অনুষ্ঠানগুলোতে হলুদ ব্যবহৃত হয়। সময়ের সঙ্গে-সঙ্গে বদলেছে হলুদ ব্যবহারের ধরন-ধারণ। শুধুমাত্র ধর্মীয় আচারে আবদ্ধ না থেকে এটি হয়ে উঠেছে ত্বক চর্চার গুরুত্বপূর্ণ উপাদানে। ত্বকের সৌন্দর্য বৃদ্ধিতে হলুদের উপকারীতার তালিকাও বেশ দীর্ঘ।

বলিরেখা দূর করতে

বলিরেখো দূর করতে হলুদ বেশ কার্যকর উপাদান। কাঁচা দুধের সঙ্গে হলুদ গুঁড়া, চালের গুঁড়া ও টমেটোর রস মিশিয়ে পেস্ট তৈরি করে মুখে মাখুন। ৩০ মিনিট রেখে উষ্ণ পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলুন। ২ টেবিল-চামুচ বাটার মিল্কের সঙ্গে হলুদ মিশিয়ে চোখের চারপাশে লাগাতে হবে। ২০ মিনিট পর ঠান্ডা পানিতে ধুয়ে ফেলতে হবে। এটি শুধু চোখের চারপাশের বলিরেখা নয়, ডার্কসার্কেলও দূর করবে। আঁখের রসের সঙ্গে হলুদ মিশিয়ে লাগালেও বলি রেখার সমস্যা দূর হয়।

ত্বকের উজ্জ্বলতা বৃদ্ধিতে

উজ্জ্বল ত্বক পেতে ও ত্বক পরিষ্কার রাখতে সমপরিমান মটর গুঁড়া ও হলুদ গুঁড়া মিশিয়ে এয়ার টাইট বোতলে সংরক্ষণ করুন। মিশ্রণটি সয়ামিল্ক অথবা টক দইয়ের সঙ্গে মিশিয়ে পেস্ট তৈরি করে সমানভাবে মুখে লাগান। ১৫ থেকে ২০ মিনিট পর উষ্ণ পানিতে ধুয়ে ফেলুন।

মুখের পশম বৃদ্ধি রোধ করতে

মুখের পশমের বৃদ্ধি কমাতে মটর গুঁড়ার সঙ্গে হলুদ মিশিয়ে অথবা পছন্দের কোন ফেসিয়ার স্ক্রাবের সঙ্গে এটি ব্যবহার করতে পারেন। দ্রুত ফলাফল পেতে নিয়মিত ব্যবহার করুন।

নাইট ক্রিম

নাইট ক্রিম হিসেবে দুধ বা টক দইয়ের সঙ্গে হলুদ মিশিয়ে পেস্ট তৈরি করুন। মাস্কটি পাতলা করে মুখে লাগিয়ে শুকিয়ে নিন। সকালে উঠে ধুয়ে ফেলুন। ময়শ্চারাইজার বা অন্য কোন নাইট স্কিন কেয়ারের সঙ্গে সামান্য হলুদ মিশিয়ে লাগাতে পারেন। সকালে সাধারণ কোন ক্লিনজার দিয়ে তা ধুয়ে ফেলুন।

ব্রণের চিকিৎসায়

অ্যান্টিসেপ্টিক এবং অ্যান্টি-ব্যাক্টেরিয়াল বৈশিষ্ট্য থাকার কারণে হলুদ ব্যাক্টেরিয়া প্রতিরোধ করে ব্রণ থেকে ত্বককে রক্ষা করে। তাই নিয়মিত ব্যবহারে ব্রণ, ব্রণজনিত লালভাব ও অন্যান্য দাগ-ছোপ দূর হয়। নারকেল তেল বা তিলের তেলের সঙ্গে হলুদ মিশিয়ে ব্যবহার করলে ব্রণ ও ব্রণের দাগ দূর হয়।

স্বাস্থ্যোজ্জ্বল ত্বকের জন্য

লেবু বা শশার রসের সঙ্গে মিশিয়ে পেস্ট তৈরি করে ১০ থেকে ১৫ মিনিট রেখে ধুয়ে ফেলুন। পুষ্টিকর ময়শ্চারাইজিং মাস্ক তৈরি করতে ৪টি বাদাম, ১ থেকে ৮ চা-চামচ হলুদ, ২ ফোটা লেবুর রস, ৩ টেবিল-চামচ দুধ কফি গ্রেন্ডারে গ্রেন্ড করে নিতে হবে যতক্ষণ না এটি মসৃণ হয়। মিশ্রণটি মুখে লাগিয়ে ২০ মিনিট রেখে ধুয়ে ফেলুন। ১ টেবিল-চামচ বেসনের সঙ্গে ১ থেকে ৪ চা-চামচ হলুদ গুঁড়া মিশিয়ে তাতে ১/২ চা-চামচ অলিভ অয়েল ও ৪/৫ ফোটা লেবুর রস দিয়ে প্যাক তৈরি করে ত্বকে মেখে ২৫/৩০ মিনিট পর ঠান্ডা পানিতে ধুয়ে ফেলুন।

 তৈলাক্ত ত্বকের জন্য

হলুদ ত্বকের অতিরিক্ত তেল নিঃসরণ নিয়ন্ত্রণ করে। হাফ    চা-চামুচ চন্দন গুঁড়া ও ৩ টেবিল-চামুচ কমলার রসের সঙ্গে হলুদ মিশিয়ে পেস্ট তৈরি করে লাগাতে হবে। ১০/১৫ মিনিট রেখে উষ্ণ পানিতে ধুয়ে ফেলুন।

শুষ্ক ত্বকের জন্য

ত্বকের শুষ্কতা দূর করতে ১টি ডিমের সাদা অংশ, ২ ফোটা অলিভ অয়েল, কয়েক ফোটা লেবুর রস ও গোলাপ জলের  সঙ্গে হলুদ ভালো করে মেশাতে হবে। মুখ, ঘাড় ও গলাসহ শরীরের অন্যান্য শুষ্ক অংশে লাগিয়ে শুকিয়ে যাওয়া পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে। এরপর উষ্ণ পানিতে ধুয়ে নিতে হবে।

পায়ের রুক্ষতা দূর করতে

গোড়ালি ফাটা বা পায়ের রুক্ষতা থেকে তাৎক্ষণিক পরিত্রান পেতে ৩ টেবিল-চামচ হলুদের সঙ্গে ৩ ফোটা নারকেল তেল মিশিয়ে লাগাতে হবে।

মাথার ত্বকের সমস্যায়

খুশকিসহ মাথার ত্বকের যেকোন সমস্যায় খুব সহজ চিকৎসার উপায় হলো হলুদ ব্যবহার। গোসলের আগে হলুদের ও অলিভ অয়েলের মিশ্রণ মাথায় লাগিয়ে ১৫ মিনিট অপেক্ষা করতে হবে। এরপর নেচারাল শ্যাম্পু দিয়ে ধুয়ে ফেলতে হবে। এতে চুল ঝরে যাওয়ার সমস্যাও কমে যায়।

মাড়ি ভালো রাখতে

এক চিমটি হলুদ গুঁড়া তিলের তেলের সঙ্গে মিশিয়ে লাগালে মাড়ি সুস্থ থাকে। মিশ্রণটি মাড়িতে ৫ থেকে ১০ মিনিট ম্যাসাজ করে উষ্ণ পানিতে কুলকুচি করে নিতে হবে।

স্বাস্থ্য রক্ষায়

দুধ বা হালকা গরম পানির সঙ্গে হলুদ মিশিয়ে পান করলে পেট পরিষ্কার থাকে। এটি ভালো রক্ত পরিশোধক হিসেবে কাজ করে। ক্যান্সারসহ যেকোন ত্বকের সমস্যা রোধ করতে হলুদ বেশ কার্যকর। হলুদে বিদ্যমান এনক্যাপসুলেট কোষ ক্ষতিগ্রস্থ ত্বকে রেডক্সের ভারসাম্য বজায় রাখে। এটি ভালো অ্যান্টিসেপ্টিক যা যেকোন ক্ষত সারাতে কার্যকর।

টিপস

  • হলুদ ব্যবহারে ত্বকে হলুদের দাগ পড়ে। তাই হেয়ার লাইন থেকে একটু দূরে হলুদ বা হলুদের যে কোন প্যাক লাগাতে হবে
  • কটন বল দুধে ভিজিয়ে নিয়ে ত্বক ভালো করে মুছে নিলে হলুদভাব কমে যাবে
  • সবার ত্বকে হলুদ সহনশীল নয়। তাই সমস্যা তৈরি হলে এটি এড়িয়ে চলাই ভালো
Avatar

admin57

About Author

Leave a comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

You may also like

Beauty Makeup & Tips

অসহনীয় গরমে দেখাবে উজ্জ্বল আর দীপ্তিময় জমকালো কোনো সাজ ছাড়াই

বলা হয় সামার উৎফুল্লতায় পরিপূর্ণ- কিন্তু গলে যাওয়া মেকআপ, লেপ্টে যাওয়া আইলাইনার আর সুপার-স্টিকি লিপস্টিক এই প্রাণবন্ত সময়টাকে বিগড়ে দিতে
Beauty Makeup & Tips

বোল্ড মেকওভার

কেবল বাইরেই রঙের ছটা নয়, যা বের করে আনবে ভেতরের রঙিন অনুভূতিকেও। কিংবা এমন মেকআপ যা আপনার মনমরা মনোভাবকে করে